পর্যটন কেন্দ্র/দর্শনীয় স্থান/রেস্ট হাউস
প্রভূত সম্ভাবনা থাকা সত্বেও কালীগঞ্জ পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারেনি। কালীগঞ্জ উপজেলা বেষ্টনকারী প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ দীর্ঘ শীতলক্ষা, বালু নদীর তীরবর্তী এলাকা, মোক্তারপুরের বনভূমি, ঐতিহাসিক নাগরী, পানজোড়া গীর্জাসহ অনেক স্থান রয়েছে যা যে কোন পর্যটক/আগন্তুককে মুগ্ধ করতে পারে।
১। বেলাই বিলঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত বেলাই বিল প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে এক ভিন্নরূপ ধারণ করে। বিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া তুমলিয়া মোড়-আওড়াখালি রাস্তাটিকে ঘিরে শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা নৌকায় করে বিল দেখতে চলে আসে। ঢাকা শহরের সন্নিকটে হওয়ায় শহুরের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে একটু বিনোদনের আশায় পুরো পরিবার নিয়ে অনেকেই চলে আসেন এ বিলে। সারা দিন ঘোরাঘুরির পাশাপাশি থাকে বিল থেকে জেলেদের ধরে আনা তাজা সুস্বাদু মাছে দুপুরের ভোজ।
২। ধনপুর বনভূমিঃ মোক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমির উপর গজারী বৃক্ষের বনভূমি রয়েছে। যথাযথ পরিচর্যা ও একটি রেস্ট হাউজ নির্মান করা হরে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
৩। নাগরীঃ পর্তুগীজ স্থাপত্য নিদর্শনে তৈরী দর্শনীয় সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চ ও সাধু আন্তুনীর গীর্জা নাগরীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশেষভাবে যারা বাঙ্গালী খ্রষ্টানদের জীবন-যাপন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, ধর্মীয় আচার আচরণসহ তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য এটি হতে পারে এক আদর্শ স্থান। এখানে খাওয়ার জন্য বাজারে সাধারণ মানে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আবার পিকনিকে গেলে কাছাকাছি গ্রামের খালি জায়গায় রান্না করে খাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রলার যোগে অনেকে পিকনিক করতে আসেন।
৪। উত্তর রূপগঞ্জ পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের রেস্ট হাউসঃ তুমুলিয়া ইউনিয়নের বরতুল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজ অবস্থিত। এটি একটি অন্যতম আকর্ষণীর রেস্ট হাউস যেখানে উপভোগ করা যায় শীতলক্ষ্যার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
৫। হযরত নবী শাহ্ (রঃ) এর দরগাঃ নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজারের সন্নিকটে বাইপাস সড়কের কাছে বিরতুল গ্রামে হযরত নবী শাহ্ (রঃ) এর দরগা অবস্থিত। জানা যায় যে, প্রায় তিনশ বছর পূর্বে তিনি চারটি পাথর নিয়ে এসে আসেন। পাথরগুলো এখনও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে যায় একটিতে হাতের ছাপ, একটিতে পায়ের ছাপ রয়েছে, আরেকটি পাথরের ওজন প্রায় ৪০/৫০ কেজি, অন্য পাথরটি ছোট। কথিত রয়েছে মাজারের কাছাকাছি কোন নৌকার যাত্রী মাজারের প্রতি অবমাননাকর কোন আচরণ করতে নৌকা আটকে যেত অথবা ক্ষতিকর কোন ঘটনা ঘটত।
৬। নাগরী গীর্জাঃ আঠার শতকের প্রথম তৃতীয় দশকে পর্তুগীজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাউ নাগরী সেন্ট নিকোলাস গীর্জায় বসে রচনা করেন বাংলা ভাষার এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খন্ডিত ব্যাকরণ। ধারনা করা হয় এটাই ছিল প্রথম প্রকাশিত বাংলা ভাষার অভিধান। বাংলাভাষার প্রথম গদ্য সাহিত্য ও রচিত হয় এই গীর্জায় বসে । আধুনিক কালে কালীগঞ্জের উল্লেখ যোগ্য সাহিত্যিকদের মধ্যে কবি আবু জাফর শামসুদ্দীন অন্যতম।
৭। বক্তারপুর ঈশা খাঁর মাজারঃ বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ইতিহাস খ্যাত মুসলিম জমিদার ঈসা খাঁন ছিলেন সোনার গাঁয়ের জমিদার। তিনি ভাওয়াল পরগনার জমিদার ফজল গাজী এবং তিলা গাজীর সাথে সখ্যতা বজায় রাখতেন। তাঁর অনেক যুদ্ধ জাহাজ/নৌকা/কোসা কালীগঞ্জ এলাকায় রাখা হত বলে অনুমান করা হয়। মুঘলদের সাথে যুদ্ধের এক পর্যায়ে ঈসা খান। ভাওয়াল পরগনার দিকে চলে আসেন এবং অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরন করেন। কালীগঞ্জের বক্তারপুরে একটি কবরকে প্রত্নঅধিদপ্তর ঈশা খাঁর কবর বলে ধারনা পোষন করছেন। এটি বক্তারপুর বাজার হতে পশ্চিমে অবস্থিত।
১১। নাগরী সেন্ট নিকোলাস চার্চঃ আঠারশতকে পর্তুগীজরা গাজীপুর পরগনার নাগরী এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তারা খৃষ্ঠ-ধর্ম প্রচার শুরু করেন। নাগরি এলাকার পানজোড়া গ্রামে গড়ে তোলেন এ উপমহাদেশের প্রথম গীর্জা যা সেন্ট নিকোলাস গীর্জা নামে খ্যাত। এটি আনুমানিক চারশত বৎসরের পুরনো একটি গীর্জা। গীর্জাটির পাশে বর্তমানে সাধু টলেন্টিনুর নামে আর একটি বৃহৎ গীর্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ধারনা করা হয় উপমহাদেশের প্রথম বাংলা অভিধান এই প্রাচীন গীর্জায় বসে রচিত হয়েছিল।
১২। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ন পাইলট স্কুল, রাজ কাচারী, কালীমন্দির এবং মাঠঃ বৃটিশ আমলে কালীগঞ্জে জয়দেবপুরের জমিদার রাজা রাজেন্দ্র নারায়ন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা আজও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ স্কুলে প্রাচীন আমলের লাল ইটের একটি দ্বিতল বিশিষ্ট সুরম্য ইমারত রয়েছে।
১৩ । সাধু অ্যান্থনীর গীর্জাঃ এটি খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বীদের নিকট অত্যান্ত ধর্মীয় পবিত্র স্থান। প্রতি বছরের ০৩ ই ফেব্রুয়ারী সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় লক্ষাধিক খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলা হয়। অনেক বিদেশী প্রতিনিধিও উক্ত স্থানে আগমন করেন।
এছাড়া বক্তারপুরের ঈশা খাঁর মাজার, তুমুলিয়া গীর্জা, ব্রাহ্মণগায়ের চিতা মন্দির পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা ও আমত্মরিকতা। সেই সংঙ্গে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ। তবে আশার কথা ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই কালীগঞ্জে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলায় উদ্যোগী হয়েছেন্ । যেমন নারগানা গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস