Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কালীগঞ্জের ঐতিহ্য

কালীগঞ্জ উপজেলা গাজীপুর জেলার মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে কালজয়ী শীতলক্ষা নদী বয়ে গেছে। বিখ্যাত মসলিন কটন মিলস, প্রান আরএফএল গ্রুপ, সেভেন সার্কেল লিঃ, আর কে জুট মিলস, ন্যাশনাল জুট মিলস, নাগরী টলেনটিনু গির্জা, তুমুলিয়া গির্জা ইত্যাদি।


ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানঃ


প্রাচীন জনপদের অন্তর্ভুক্ত জন বসতি এই অঞ্চলে সু প্রাচীনকাল থেকেই ছিল তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক বিজিত ও বিতাড়িত লক্ষণ সেন ও তার বংশধরগন দীর্ঘ দিন পূর্ব বঙ্গে রাজত্ব করেছিল। এ সময় অত্র অঞ্চলের অধিকাংশ জনগন ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরে বাংলা মুসলিম রাজত্ব কালে গাজীপুর অনেকগুলো চেদি রাজ্যে বিভক্ত হয়। কালীগঞ্জ ছিল স্বাধীন সামম্ত রাজ্যের রাজা থাইডা ডোসকার অধীনে। এই চেদী রাজ্যের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু লোক পাওয়া যায় যারা চন্ডাল উপজাতি নামে পরিচিত, উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এ এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়। সে সময়ে ঐতিহ্যবাহি গাজী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাহ পালোয়োন খান , আওলিয়া শাহ কারফরমা, গোলাপ শাহের ভ্রাতা সরল শাহ অত্র এলাকায় ধর্ম প্রচারে আসেন বলে প্রমান পাওয়া যায়। ইতিহাস খ্যাত বার ভূইয়াদের অন্যতম ফজল গাজি, তিলা গাজি, ভাওয়াল রাজত্ব গড়ে তোলেন। তৎকালিন সময়ে বারভূইয়াদের অন্যতম ঈসা খান এ অঞ্চলে আসতেন বলে ইতিহাসে প্রমান আছে।


সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কালীগঞ্জ এলাকার নাগরী এলাকায় খৃষ্টধর্ম প্রচারের সূচনা হয়। মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠির বাইরে এ এলাকার কিছু আদিবাসী যেমন ডোম, সাঁওতাল, কোচ, রাজবংশী, মান্দী বা গারো সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করতো।


চৌড়াঃ চৌড়ার পূর্ব নাম ছিল টেরা, অপভ্রংশ হয়ে হয়েছে চৌড়া। কালীগঞ্জের নিকটে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত চৌড়া গ্রামে ইসলাম ধর্মের প্রচারক শাহ কারপরমা (রাঃ) প্রথম আসত্মানা ফেলেন। পরে ভাওয়ালের গাজী বংশীয় শাসকরা চৌড়াকে ভাওয়ালের রাজধানী করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এখনও মাটির নিচে চাপা পড়া ধবংশাবশেষ ছাড়াও একটি বিশাল (গাজীদের নির্মিত) দীঘি রয়েছৈ, ষোড়ষ শতাব্দিতে নির্মিত মসজিদ রয়েছে দীঞির পাড়ে। এছাড়া নিতামত্ম অবহেলিত অবস্থায় পতিত দুটি প্রাচীন কবরকে পালোয়ান খাঁ গাজী ও কা্উয়ুম খাঁ গাজীর কবর হিসেবে চিহ্নি করা হয়।


বক্তারপুরঃ ধারণা করা হয়, বরকত গাজীর নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছিল বরকতপুর। পরবর্তীকালে অপভ্রংশ হয়ে বক্তারপুর হয়েছে। আবার অনেকের ধারণা পূর্বে ঈশা খাঁ এখানে অনেক বজরা নিয়ে গোপনে বসবাস করতেন। তখন নাম হয় বজ্রাপুর, তা’ থেকে বক্তারপুর। স্থানটি গাজীদের সুরম্য স্থাপনায় ছিল পরিপূর্ণ । কালের করাল গ্রাসে আজ তা ভূগর্ভে প্রোথিত। জনশ্রুতি আছে ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়। ঐতিহাসিক যোতিন্দ্র মোহন রায় উল্লেখ করেছেন ‘‘ বজ্রাপুরে পিতা ঈশা খাঁর মতই পুত্র মাসুম খাঁ নানা দুযোর্গময় সময়ে আশ্রয় নিয়েছেন এবং এখান থেকেই ছিল, পরে তার ছেলে মাসুম খাঁর আমলে মোঘলসেনা শাহবাজ খাঁ ১৫৮৩ সালে ধবংশ করেন।


বালীগাঁওঃ উপজেলা সদরের সন্নিকটে বালীগাঁও গ্রামের একটি ধ্বংসস্ত্তপকে স্থানীয় জনসাধারণ বাহাদুর গাজী কর্তৃক নির্মিত মসজিদের ধবংসাবশেষ বলে মনে করেন। জানা যায়, ধবংসস্ত্তপের নিকটবর্তী একটি বাড়িতে ধবংশপ্রাপ্ত মসজিদটির একটি শিলালিটি রক্ষিত আছে যাতে বাহাদুর গাজী কর্তৃক মসজিদ নির্মানের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়া এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ শিল্প ও কৃষি উৎপাদন কেন্দ্র।


কোষাখালীঃ কালীগঞ্জের বক্তাপুর ইউনিয়নে কোষাখালী নামক স্থানের কোষাখালী খালে ফজলগাজী ও বাহাদুর গাজীর রণতরী রাখা হত। বাহাদুর গাজীর ২০০ কোষা বা হালকা রণতরী ছিল। পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহৃত এই খাল আজও বর্তমান।


নাগরীঃ উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম প্রামেত্ম বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত একটি ঐতিহাসিক জনগপদ যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ খ্রীস্টান মিশনারীর মর্যাাদায় আসীন। নাগরীতে ষোড়শ শতকের শেষ দিকে পুর্তগীজ খ্রীস্টানরা আসত্মানা ফেলে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিক্রমে ১৬৬৪ সনে তারা প্রথম গীর্জা স্থাপন করেন। পরে ১৬৮০ সনে পাকা ইমারত হয় নাগরীর সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চ। এখান থেকে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলা ভাষার প্রথম বাইবেল অনুদিত হয়। সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার দ্বিভাষিক অভিধান ও প্রথম গদ্য ছাপার বইও প্রকাশিত হয়।


তুমুলিয়াঃ কালীগঞ্জ উপজেলাধীন শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। এখানে রয়েছে দেশের বিখ্যাত ১৮৪৪ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সাধু যোহনের চার্চ। চার্চ ভবনটি দেখতে খুবই সুন্দর।


পানজোড়াঃ উপজেলার নাগরী গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত টিলা নিম্মভূমির সমন্বয়ে গঠিত ভূভাগের উপরিতলে প্রচুর বৃক্ষলতা রয়েছে। ১৭৮৯ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পানজোড়া গ্রামের সাধু আমত্মনির গীর্জার কারণে উক্ত অঞ্চল ঐতিহাসিক স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে।


জামালপুরঃ কালীগঞ্জের জামালপুর বাজারটি ছিল মসলিন সংগ্রহের কেন্দ্র। পূর্বের ধারা বহন করে হিন্দু যোগী বা নাথ এবং মুসলমান তাঁতীগণ উৎকৃষ্টি মানের তোয়ালে, লুঙ্গি, ধুতি, চাঁদর ইত্যাদি তৈরি করে।


উলুখোলাঃ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও বিখ্যাত গ্রামীণ কৃষি পণ্যের বাজার। বালু নদীর দক্ষিণ তীরে রূপগঞ্জের উত্তর সীমায় অবস্থিত। এখান থেকে উৎপাদিত কাচাঁ কৃষি পন্য বহু প্রাচীনকাল হতে শুরু হয়ে আজও দেশে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দক্ষিণ পার্শ্বে বহুল আলোচিত পূর্বাচল উপশহর বাসত্মবায়নাধীন।


কালীগঞ্জঃ উপজেলা সদর অবস্থিত। এখানে পূর্বে মসলিন উৎপাদিত হত। শত বছরের প্রাচীন স্কুল আর আর এন (রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মসলিন কটন মিল এখানে অবস্থিত। কালীগঞ্জ ছিল এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নীল চাষের এলাকা। ইংরেজ কুঠিয়ালদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জের নীল চাষীগণ প্রতিবাদ মুখর হয়ে বিদ্রোহ করেছিল।


এ ছাড়া ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত যীশু হৃদয়ের গীর্জার জন্য রাঙ্গামাটিয়া, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাধু অগাস্টিনের গীর্জার জন্য মঠবাড়ি গ্রাম ঐতিহাসিক স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে।