Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সাহিত্য

ভাষা ও সাহিত্য

রত্নাগর্ভা কালীগঞ্জ, যার বুকে জম্ম নিয়েছে অনেক ইতিহাস। ভাষা ও সাহিত্য চর্চাতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ও করছে কালীগঞ্জ উপজেলা।

 

বাংলা ভাষার প্রথম অভিধানঃ কালীগঞ্জের গর্ব আঠার শতকের প্রথম তিনের দশকে পর্তুগীজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাঁউ নাগরী গীর্জায় বসে রচনা করেন বাংলা ভাষায় এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খন্ডিত ব্যাকরণ ‘‘ভোকাবুলারিও এম ইদিওমা বেনগেল্লা ই পর্তুগীজ ( Vocabulario Em Edioma Bengalla E Portuguese)” বা বাংলা পর্তুগীজ শব্দকোষ ও বাগধারা। অভিধানটিতে বহুলাংশে প্রধানত ভাওয়াল অঞ্চলের প্রাত্যহিক শব্দ স্থান পেয়েছে। সমগ্র ভারত বর্ষে এটাই ছিল প্রথম প্রকাশিত (১৭৪৩ সালে লিসবনে রোমান বর্ণমালায় মুদ্রিত) বাংলা ভাষায় অভিধান যা নিজেই প্রকাশ করেন। 

 

          বাংলা ভাষার প্রথম গদ্য গ্রন্থ্যঃ বাংলা সাহিত্যের সুতিকাগার হল কালীগঞ্জ। ফরিদপুরের ভূষনার হিন্দু রাজকুমার (নাম জানা যায়নি) অপহরণের পর পরবর্তীতে খ্রীষ্টান হয়ে নামকরণ হয় দোম আমত্মনি দো রোজারিও। তিনি ১৭৩৩ সালে নাগরী গীর্জায় বসে বাংলা ভাষায় প্রথম গদ্য গ্রন্থ্যঃ ‘‘ ব্রাম্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’’ রচনা করেন। জনৈক খ্রীষ্টান অথবা রোমান ক্যাথলিক এবং জনৈক ব্রাম্মণ বা হিন্দুদের আচার্যের মধ্যে শাস্ত্র সম্পর্কীয় তর্ক ও বিচার এই গ্রন্থের বক্তব্য। কালীগঞ্জের বাংলা বলার অতীত ঢংয়ে রচিত হয়েছে এই বই। ১৭৩৩ সালে রচিত হলেও লিসবনে রোমান বর্ণমালায় ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাঁউ কর্তৃক প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে।

 

          বাংলা ভাষার দ্বিতীয় গদ্য গ্রন্থ্যঃ বাংলা ভাষার প্রথম অভিধানের রচয়িতা পর্তুগীজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাঁউ ১৭৩৪ সালে নাগরী গীর্জায় বসে রচনা করেন বাংলা ভাষার দ্বিতীয় গদ্য গ্রন্থ্যঃ ‘‘কৃপা শাস্ত্রের অর্থভেদ’’। পুসিত্মকাটি যীশু খৃস্ট ও তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে রচিত। এটিও তিনি ১৭৪৩ সালে লিসবন থেকে রোমান বর্ণমালায় ছাপার হরফে প্রকাশ করেন।

 

          দোম আমত্মামিত্মর পালাগানঃ বাংলা ভাষার প্রথম গদ্য গ্রন্থ্যের রচয়িতা দোমআমেত্মানির দো রোজারিও লক্ষ্য করলেন স্থানীয় ভাবে ধর্ম প্রচারের জন্য দরকার গণমানুষের কথামালা। সেই কালে তা সম্ভব ছিল পালাগানের মাধ্যমে। ফলে তিনি সরল ভাবে রচনা করলেন পালাগান। ধীরে ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

 

          এছাড়া কথ্য ভাষায় আঠার শতকের ত্রিশের দশকে বাইবেলের কিছু অংশের অনুবাদও করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হ্যানা ক্যাথরিন ম্যানহাল কর্তৃক রচিত ‘‘ করুনা ও ফুলমনির বিবরণ’’ গ্রন্থ্যটি ও ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

 

          আধুনিক কালে কালীগঞ্জের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের মধ্যে আবু জাফর সামসুদ্দিন, আব্দুল আজিজ বাগমার, হুমায়ুন খান, বুলবুল চৌধুরী এবং ভাষা সৈনিক আলাউদ্দীন  হোসেন অন্যতম।

          ভাষা ও সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্বঃ রত্নাগর্ভা কালীগঞ্জ যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে ভাষা ও সাহিত্য জগতের উল্লেখ যোগ্য ব্যাক্তিত্বের, যেমনঃ

 

          ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাঁউঃ বাংলা সাহিত্য, ভাষা এমনকি ভারতবর্ষের সাহিত্য শিক্ষাঙ্গনে পর্তুগীজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাঁউ এর নাম অত্যমত্ম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে। তিনি আঠার শতকে সুদুর পর্তুগাল থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য কালীগঞ্জের নাগরী এসেছিলেন। নাগরীতে বসে ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে কালীগঞ্জের কথ্য ভাষায় প্রথম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দ্বিভাষিক অভিধান ও খন্ডিত ব্যাকরণ এবং দ্বিতীয় গদ্য গ্রন্থ্য কৃপা শাস্ত্রের অর্থভেদ রচনা করেন। তৎকালে কোন প্রেস না থাকায় তিনি ১৭৪৩ সালে তার ও দোম আমত্মনি দো রোজারিও এর জন্য পর্তুগালের লিসবন থেকে মুদ্রণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন।

 

          দোম আমেত্মানি দো রোজারিও ১৬৬৩ খ্রীস্টাব্দে মগ জলদস্যুরা ভূষণার রাজবাড়ী লুন্ঠনের সময় শিশু রাজকুমারকে অপহরণক করে আরাকানে নিয়ে যান। তৎকালে আরাকানে বসবাসকারী পর্তুগীজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দো রোজারিও টাকার বিনিময়ে রাজকুমারকে ক্রয় করেন। খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করে নাম দেন দোম আমেত্মানি রোজারিও। তিনি কালীগঞ্জের বাংলা কথ্য ভাষায় লিখিত প্রথম গদ্য গ্রন্থ‘‘ ব্রাম্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’’ ১৭৩৩ সালে নাগরী গীর্জায় বসে রচনা করেন।

 

          আবু জাফর সামসুদ্দিনঃ আবু জাফর মোহাম্মদ সামসুদ্দিন ওরফে আবু জাফর সামসুদ্দিন ১৯১১ সালের ১২ই মার্চ কালীগঞ্জের দক্ষিণবাগ গ্রামে জম্মগ্রহন করেন। পিতার নাম মোহাম্মদ আববাস আলী ভূঁইয়া ও মাতার নাম মোছাঃ আফিফা খাতুন, দাদা ছিলেন বিখ্যাত মাওলানা কেরামত আলীর খলিফা বা স্থানীয় প্রতিনিধি। ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সরকারী চাকুরী দিয়ে জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে সাহিত্য ও সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে পরিত্যক্ত সাক্ষী (১৯৪৭), ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান(১৯৬৩), পদ্মা-মেঘনা-যমুনা(১৯৭৪), মুক্ত(১৯৪৮), শংকর সংকীর্তন (১৯৮০), প্রপঞ্চ (১৯৮০), দেয়াল (১৯৮৬), আত্নজীবনী আত্নস্মৃতি (১৯৮৯), প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য ও সাংবাদিকতা সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ২১শে পদক, আলাওল  সাহিত্য পুরস্কারসহ বিবিধ পদক লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ২৪শে আগষ্ট এই মহান কৃতি পুরুষ ইহলোক ত্যাগ করেন।  

 

 

          আলাউদ্দীন হোসেনঃ বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক আলাউদ্দীন হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালে কালীগঞ্জের ভাদার্ত্তী গ্রামে। রোটারিয়ান আলাউদ্দিন হোসেন গাজীপুর রোটারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। তার লেখা প্রবন্ধ বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত।

 

          আব্দুল আজিজ বাগমারঃ জম্ম ২২শে মে ১৯৪৬ সনে কালীগঞ্জে। তিনি স্বাধীকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচয়িতা, যেমন, বাঙ্গালী কি চান ?, শকুন শৃগালের আবার বাংলা আক্রমন, তিহার জেলে ত্রিশ দিন, বিপন্ন মানবতা, স্বাধীনতার স্বপ্ন উম্মেষ ও অর্জন, মুক্তিযুদ্ধ ও আতিয়া ইত্যাদির রচয়িতা।